ছবি, কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল -লক্ষ্মীপুরের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য
খবরের সময় ডেস্ক
কুয়েতে গত ৬ জুন২০২০ইং আটক হন লক্ষ্মীপুরের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। তাকে আটকের দুই দিন পর গত ৮ জুন কুয়েতের সিআইডি আটক করে বাংলাদেশি ১২ শ্রমিককে। এই শ্রমিকরা সিআইডির কাছে জবানবন্দি ও কুয়েতের আদালতে সাক্ষী দেয়। পরে গত মঙ্গলবার ভোর রাতে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এসব ভুক্তভোগী শ্রমিক। তারা জানান, এমপি পাপুলের অভিযোগের ব্যাপারে ১১ প্রবাসী বাংলাদেশির সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
ফেরত আসা ময়মনসিংহের শাহ আলম এমপি পাপুলের কোম্পানির মাধ্যমে কুয়েত যেতে দিয়েছিলেন সাত লাখ টাকা। মাসিক ১৪০ দিনার বেতনে নির্ধারিত চাকরির কথা বলে নিয়ে যাওয়া হলেও তাকে কুয়েতের এয়ারপোর্টে ব্যাগ ও মালামাল টানার কাজ দেওয়া হয়। শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, এসব কাজ করলে কুয়েতিরা এক দুই দিনার দিত। এতে প্রতিদিন তেরো, চৌদ্দ দিনার আয় হতো। কিন্তু পাপুলের লোকজনকে এখান থেকে প্রতিদিন দশ দিনার নিয়ে যেত। ফলে সারা দিন কাজ করার পর থাকত দুই দিনার কিংবা তিন দিনার।
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার মো. সোহাগ বলেন, আমি দুই বছর আগে ফকিরাপুল পাপুুল সাহেবের অফিসে সাত লাখ টাকা দিয়ে কুয়েত যাই। আমাদের ১২ ঘণ্টা কাজ ও ১৪০ দিনার বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কুয়েত যাওয়ার পর ১৭ ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছে। আমি একটা মার্কেটে কাজ করেছি। সেখানে সব মিলিয়ে নব্বই থেকে একশ দিনার পেতাম। প্রতিদিন পাপুল সাহেবের লোকজন এসে চার দিনার করে নিয়ে যেত। আমাদের কুয়েতের কাবাত মরুভূমির একটি জায়গায় রাখা হয় যেখান থেকে আমাদের সিআইডি ধরে নিয়ে যায়।
নওগাঁর আবদুল আলিম দেড় বছর আগে সাত লাখ টাকা দিয়ে কুয়েতে যান পাপুলের কোম্পানির মাধ্যমে। তিনি বলেন, মার্কেটে ক্লিনার হিসেবে কাজ করতে হতো। ১৬ ঘণ্টা কাজ করে বেতন দিত মাত্র ১০০ দিনার। ভালো কাজের জন্য কোম্পানির অফিসে গেলে নির্যাতন করত। আমাকে দুই দিন নির্যাতন করেছে। খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটিয়েছি। সিআইডির কাছে আমরা এসবই বলেছি।
পাপুলের জেল হতে পারে সাত থেকে ১৪ বছর : কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মানব পাচার ও মুদ্রা পাচার, ঘুষ-দুর্নীতির মতো প্রতিটি অপরাধে কুয়েতে এমপি পাপুলের জেল হতে পারে সাত থেকে ১৪ বছর করে। দেশটির তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে এমপি পাপুল স্বীকার করেছেন, কুয়েতে একজন আমলাসহ তিনজনকে ২১ লাখ দিনার অর্থাৎ ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ বাংলাদেশি টাকা ঘুষ দিয়েছেন। ঘুষ গ্রহণকারীদের নামও জানিয়েছেন এমপি কাজী শহীদ পাপুল। এরা হলেন- কুয়েতের একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, অন্যজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আমলা আর শেষজন দেশটির এক নাগরিক। সাতজনের মধ্যে কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান তিন এমপিও রয়েছেন।
আরব টাইমস জানিয়েছে, কুয়েতে মানব পাচার নিয়ে বাংলাদেশের এমপির বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউশন যে তদন্ত চালাচ্ছে, তা নিয়ে পরের ধাপের তদন্ত চালাবে দেশটির দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ।
এমপি পাপুলের স্ত্রী-মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে পাপুল এরই মধ্যে বিদেশে অবস্থান করায় তার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্যরা হলেন- পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও সেলিনার বোন জেসমিন। গতকাল পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বরাবর পাঠানো দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ অনুরোধ করা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর পাপুলকে আদালতে হাজির করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। কুয়েতের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মানব ও অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, এমন কয়েকশ ব্যক্তির তালিকা করেছে কুয়েত সরকার। সেই তালিকা ধরেই সম্প্রতি বিতর্কিত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে দেশটির গোয়েন্দা বিভাগ। সেই অভিযানেই গ্রেফতার হন বাংলাদেশের এমপি পাপুল।